বর্তমানে মোটা হওয়া শুধু সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, বরং এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য না খেয়ে থাকা, ভুল ডায়েট বা ক্ষতিকর মেডিসিন গ্রহণ করে থাকেন, যা শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন কমানোই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি। চলুন জেনে নেই কিছু কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত টিপস যা মেনে চললে ওজন কমানো সম্ভব।

ওজন কমাতে না খেয়ে থাকার প্রয়োজন নেই; বরং প্রতিদিন পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। প্লেটের অর্ধেক ভরে ফেলুন সবুজ শাক-সবজিতে, ২৫% প্রোটিন (মাছ, ডিম, মুরগি, ডাল), এবং ২৫% কম কার্বোহাইড্রেট (ওটস, ব্রাউন রাইস, হোল গ্রেইন রুটি)। ভাজাপোড়া এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।

চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে। সফট ড্রিংক, চকোলেট, বেকারি আইটেম, প্যাকেটজাত স্ন্যাক্স—এই সবই ওজন বাড়ানোর বড় কারণ। এগুলোর পরিবর্তে ফলমূল বা বাদাম খাওয়া ভালো।

অনেক সময় ক্ষুধার অনুভূতি আসলে তা পানির অভাব থেকেও হতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। খাবারের আগে এক গ্লাস পানি পান করলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়।

শুধু ডায়েট নয়, নিয়মিত ব্যায়ামও ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং বা ঘরের হালকা ব্যায়াম করলেই অনেক ফল পাওয়া যায়। যাদের সময় কম, তারা “HIIT” বা ঘন ঘন শর্ট এক্সারসাইজ ট্রাই করতে পারেন।

কম ঘুম শরীরের হরমোন ব্যালান্স নষ্ট করে এবং খিদে বাড়িয়ে দেয়। রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। রাত জেগে মোবাইল ঘাঁটা বা মুভি দেখা কমিয়ে দিন।

ওজন কমানো কোনো ম্যাজিক নয়। এটি একটি ধৈর্যের পরীক্ষা। দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ ডায়েট বা ওষুধে না গিয়ে ধাপে ধাপে অভ্যাস পরিবর্তন করুন। প্রতিদিন ১% উন্নতি করলেও মাস শেষে তা বড় পার্থক্য গড়ে তুলবে।

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থেকেও অনেক সময় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় (যাকে বলে “emotional eating”)। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, হবি রাখা, প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো—এসব উপায়ে মানসিক শান্তি বজায় রাখুন।

প্রতিদিন ওজন মাপা অনেক সময় হতাশার কারণ হতে পারে। সপ্তাহে একবার সকালে একই স্কেলে ওজন মাপা ভালো। এছাড়া, আয়নায় নিজের পরিবর্তন খেয়াল করাও মোটিভেশনের জন্য কার্যকর।
উপসংহার
ওজন কমানোর জন্য কড়া ডায়েট নয়, বরং সঠিক জীবনধারাই সবচেয়ে কার্যকর। প্রতিদিন একটু একটু করে বদল আনুন খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, ব্যায়াম ও মানসিক আচরণে। নিজেকে সময় দিন, নিজের প্রতি সদয় হোন। কারণ স্বাস্থ্যই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
Image Credit: Internet
0 Comments